Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

Title
Activities following for dec15-jan14
Details

সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, আপনাদের সবার জন্য শীতের শুভেচ্ছা। হেমন্ত শেষে ঘন কুয়াশার চাদরে মুড়িয়ে শীত এসে উপস্থিত হয়েছে আমাদের মাঝে। বাংলার মানুষের মুখে অন্ন জোগাতে শীতের ঠাণ্ডা হাওয়ায় লেপের উষ্ণতাকে ছুড়ে ফেলে আমাদের কৃষক ভাইয়েরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন মাঠের কাজে। মাঠের কাজে সহায়তার জন্য আসুন সংক্ষেপে আমরা জেনে নেই পৌষ মাসে সমন্বিত কৃষির সীমানায় কোন কাজগুলো আমাদের করতে হবে।
 

বোরো ধান
অতিরিক্ত ঠাণ্ডার সময় রাতের বেলা বীজতলা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনের বেলা তুলে ফেলতে হবে। এতে চারার ভালোভাবে বেড়ে ওঠে;
চারাগাছ হলদে হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিতে হবে;
মূল জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে পানিসহ কাদা করতে হবে;
জমিতে জৈব সার দিতে হবে এবং শেষ চাষের আগে দিতে হবে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার;
চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে মূল জমিতে চারা রোপণ শুরু করতে পারেন;
ধানের চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
 

গম
গমের জমিতে ইউরিয়া সারের উপরিপ্রয়োগ এবং প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে;
চারার বয়স ১৭-২১ দিন হলে গম ক্ষেতের আগাছা পরিষ্কার করে একরপ্রতি ১২-১৪ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে এবং সেচ দিতে হবে;
সেচ দেয়ার পর জমিতে জো আসলে মাটির ওপর চটা ভেঙে দিতে হবে;
গমের জমিতে যেখানে ঘন চারা রয়েছে সেখানে কিছু চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে।
 

ভুট্টা
ভুট্টা ক্ষেতের গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে;
গোড়ার মাটির সাথে ইউরিয়া সার ভালো করে মিশিয়ে দিয়ে সেচ দিতে হবে ;
গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেঙে দিতে হবে;
ভুট্টার সাথে সাথী বা মিশ্র ফসলের চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করতে হবে।
 

আলু
চারা গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টিমিটার হলে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে;
দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পরপর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে।
আলু ফসলে নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। মড়ক রোগ দমনে ২ গ্রাম ডায়থেন এম ৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্ডোফিল প্রতি লিটার পানির সাথে মিশিয়ে ৭ দিন পর পর স্প্রে করতে হবে।
মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হবে।
তাছাড়া আলু ফসলে মালচিং, সেচ প্রয়োগ, আগাছা দমনের কাজগুলোও করতে হবে।
আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে।
আলু তোলার পর  ভালো করে শুকিয়ে বাছাই করতে হবে এবং সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে।
 

তুলা
তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। তুলা সাধারণত ৩ পর্যায়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০ শতাংশ বোল ফাটলে প্রথম বার, বাকি ফলের ৩০ শতাংশ পরিপক্ব হলে দ্বিতীয় বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ব হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে;
রৌদ্রময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হয়;
ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
 

ডাল ও তেল ফসল
মসুর, ছোলা, মটর, মাসকালাই, মুগ, তিসি পাকার সময় এখন;
সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে;
আর ডাল ফসলের ক্ষেত্রে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে ফসল সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমিতে উর্বরতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।
 

শাকসবজি
ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, বেগুন, ওলকপি, শালগম, গাজর, শিম, লাউ, কুমড়া, মটরশুঁটি এসবের নিয়মিত যত্ন নিতে হবে।
টমেটো ফসলের মারাত্মক পোকা হলো ফলছিদ্রকারী পোকা। ফেরোমন ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫টি ফাঁদ স্থাপন করতে হবে। আক্রমণ তীব্র হলে কুইনালফস গ্রুপের কীটনাশক (দেবিকইন ২৫ ইসি/কিনালাক্স ২৫ ইসি/করোলাক্স ২৫ ইসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমাণ মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়।
টমেটো সংগ্রহ করে বাসায় ৪-৫ মাস পর্যন্ত সংরক্ষণ করার জন্য আধা পাকা টমেটোসহ টমেটো গাছ তুলে ঘরের ঠাণ্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলো পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে।


শীতকালে মাটিতে রস কমে যায় বলে সবজি ক্ষেতে চাহিদা মাফিক নিয়মিত সেচ দিতে হবে;
এছাড়া আগাছা পরিষ্কার, গোড়ায় মাটি তুলে দেওয়া, সারের উপরিপ্রয়োগ ও রোগবালাই প্রতিরোধ করা জরুরি।
 

গাছপালা
গত বর্ষায় রোপণ করা ফল, ঔষধি বা কাঠ গাছের যত্ন নিতে হবে।
গাছের গোড়ার মাটি আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা পরিষ্কার করতে হবে।
প্রয়োজনে গাছকে খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে।
রোগাক্রান্ত গাছের আক্রান্ত ডালপালা ছাঁটাই করে দিতে হবে।
গাছের গোড়ায় নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
 

প্রাণিসম্পদ
শীতকালে পোলট্রিতে অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব সমস্যা দেখা যায়। তাই প্রয়োজনীয় যত্ন নিতে হবে;
মোরগ-মুরগির অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড খাওয়াতে হবে।
শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোলট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে;


এ সময় হাঁসের যেসব রোগ হয় সেগুলো হলো- হাঁসের প্লেগ রোগ, কলেরা রোগ এবং বটুলিজম। প্লেগ  রোগ প্রতিরোধে ১৮-২১ দিন বয়সে প্রথম মাত্রা এবং প্রথম টিকা দেয়ার পর ৩৬-৪৩ দিন বয়সে দ্বিতীয় মাত্রা পরবর্তী ৪-৫ মাস পরপর একবার ডাক প্লেগ টিকা দিতে হবে;
গাভীর জন্য শীতকালে মোটা চটের ব্যবস্থা করা খুব জরুরি;  


শীতকালে ছাগলের নিউমোনিয়া রোগটি খুব বেশি হয়। যদি ৫ দিনের বেশি কাশি ও দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা হয় তবে বুঝতে হবে প্যারাসাইটের জন্য নিউমোনিয়া হয়েছে। নিউমোনিয়াতে সেফটিয়াক্সোন ও টাইলোসিন ব্যবহারে খুব ভালো ফল পাওয়া যায়।
 

মৎস্যসম্পদ
শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। কারণ এ সময়ে পুকুরে পানি কমে যায়। পানি দূষিত হয়। মাছের রোগবালাইও বেড়ে যায়;
শীতের সময় কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা উদর ফোলা রোগ বেশি হয়। এ রোগ প্রতিরোধে মাছের ক্ষত রোগ যাতে না হয় সে ব্যবস্থা করতে হবে। আর এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্ট্রেপটোমাইসিন পর পর ৭ দিন খাওয়াতে হবে।


সুপ্রিয় কৃষিজীবী ভাইবোন, শীতকাল আমাদের কৃষির জন্য একটি নিশ্চিত মৌসুম। শুকনো মৌসুম বলে মাটিতে রস কম থাকে। তাই যদি প্রতি ফসলে চাহিদা মাফিক সেচ প্রদান নিশ্চিত করতে পারেন তাহলে দেখবেন আপনার জমির ফলন অনেকখানি বেড়ে যাবে। একমাত্র কৃষির মাধ্যমে আমরা আমাদের দেশকে সমৃদ্ধ করতে পারি। আপনাদের সবার জন্য শুভ কামনা।

 

Images
Attachments
Publish Date
24/12/2023
Archieve Date
31/03/2024